আমার প্রশ্ন হল কেন ইসলাম ধর্মে নারী নাবী আসেনি ?

প্রশ্নঃ আমার প্রশ্ন হল কেন ইসলাম ধর্মে নারী নাবী আসেনি ?
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েকঃ
বোন জানতে চেয়েছেন, কেন ইসলামে নারী নাবী আসেনি? যদি নাবী বলতে আপনি বোঝেন যে, এমন এক ব্যক্তি যিনি আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে বাণী গ্রহণ করেন এবং যিনি মানব জাতির নেতা হিসেবে কাজ করেন; তাহলে সেই অর্থে নিশিচত করে বলতে পারি যে, ইসলামে কোন নারী নাবী আসেনি। এবং এটাই সঠিক।
কারণ একজন নারীকে যদি নাবী হতে হয় তাহলে তাকে সমগ্র মানুষের নেতৃত্ব দিতে হবে। কিন্তু ক্বুর’আনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে পুরুষরা হলো পরিবারের প্রধান। সুতরাং যদি পুরুষ পরিবারে প্রধান হয়ে থাকে তবে কিভাবে নারী সমগ্র মানুষের নেতৃত্ব দিবে ?
এছাড়াও একজন নাবীকে সলাতের জামা’আতের নেতৃত্ব হয়। আপনারা জানেন যে সলাতে বেশ কিছু অঙ্গভঙ্গি রয়েছে যেমনঃ কিয়াম, রুকু, সাজদাহ ইত্যাদি। যদি একজন নারী নাবী সলাতে নেতৃত্ব দিত তবে জামা’আতের পিছনে যে সকল পুরুষ সলাত আদায়ে করত- এটা তাদের এবং ইমাম উভয়ের জন্যই বেশ বিব্রতকর হত।
এখানে আরো অনেক ব্যাপার রয়েছে। যেমনঃ একজন নাবীকে সকল সাধারণ মানুষের সাথে সর্বদা দেখা সাক্ষাৎ করতে হয়। কিন্তু এটা একজন মহিলা নাবীর পক্ষে অসম্ভব। কারণ ইসলাম নারী-পুরুষ পরস্পরের মেলামেশার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে।
যদি মহিলা নাবী হতো এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সে যদি গর্ভবতী হতো, তবে তাঁর পক্ষে কয়েক মাস নবুওয়াতের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হতো না। যদি তাঁর সন্তান হয় তবে তাঁর পক্ষে এটা খুব কঠিন হয়ে যাবে সন্তান পালন করা এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করা।
অপরদিকে একজন পুরুষের পক্ষে পিতৃত্ব এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করা একজন মহিলার মাতৃত্ব এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করা থেকে তুলনামূলক সহজ।
কিন্তু আপনি যদি নাবী বলতে শুধু বোঝেন যে, এমন একজন ব্যক্তি যিনি আল্লাহ্‌র পছন্দের এবং যিনি পবিত্র ও খাঁটি ব্যক্তি, তবে সেখানে কিছু নারীর উদাহরণ রয়েছে-
আমি এখানে উত্তম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করব মারইয়াম (আ)-এর নাম। তিনি ছিলেন মনোনীত এবং পরিশুদ্ধ। তিনি ছিলেন ঈসা (আ) –এর মাতা।
সূরাহ আলে-ইমরানের ৪২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে যে-
“যখন ফেরেশতারা বলেছিল, হে মারইয়াম ! ‘আল্লাহ্‌ আপনাকে মনোনীত করেছেন, পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন বিশ্বজতের নারীদের উপর।”
(আলে-ইমরান, আয়াত ৪২)
এছাড়াও সূরাহ তাহ্‌রীম-এ ফেরাউনের স্ত্রীর “আছিয়া” কথা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন-
“আল্লাহ্‌ বিশ্বাসীদের জন্য ফেরাউনের স্ত্রী [আছিয়া] এর অবস্থা বর্ণনা করেছেন।”
(আত-তাহরীম, আয়াত ১১)
ফিরাউনের স্ত্রী আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করেছিলেন-
“হে আমার রব ! আমার জন্য বেহেশতের মধ্যে আপনার সন্নিকটে গৃহ নির্মাণ করে দিন, আর আমাকে ফেরাউন হতে এবং তাঁর [কুফুরী] আচরণ হতে রক্ষা করুণ, আর আমাকে সমস্ত অত্যাচারী লোকজন হতে হিফাজত করুণ।
(আত-তাহরীম, আয়াত ১১)
একটু কল্পনা করুণ, তিনি ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সম্রাট ফারাও-এর স্ত্রী। অথচ তিনি আল্লাহ্‌র ভালবাসার জন্য স্বীয় আরাম-আয়েশ ও বিলাসিত ত্যাগ করতে চেয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন আয়িশাহ (রা), খাদিজা (রা)।
সুতরাং আপনি যদি বুঝাতে চান যে আল্লাহ্‌র পছন্দের, পবিত্র ও খাঁটি তাহলে আপনি উনাদেরকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন।
আশাকরি সবাই বুঝতে পেরেছেন।

0 comments: