সময় : 5:23 pm । প্রকাশের তারিখ : October 30, 2014
পত্রিকাটিতে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা হলো বিদেশি খবর যাচাই বাছাই করার সুযোগ নেই। সে কারণে পশ্চিমা গণমাধ্যম বিশেষ করে এএফপি, রয়টার্স, এপি, ভোয়া বা বিবিসি যা দেয় তাই চোখ বন্ধ করে গিলতে হয়। আর মিডিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে যারা বসে আছেন তারাও এগুলো নিয়ে এত মাথা ঘামান না অথবা মাথা ঘামালেও ওই পশ্চিমাদের পক্ষ নেবেন। আর নারী বা কথিত মানবাধিকার ইস্যু হলে তো কথাই নেই।
পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোয় বলা হচ্ছে রেহানেকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। আরো বলা হচ্ছে ধর্ষণ থেকে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে মহিলাটি ওই লোকটিকে খুন করেছেন। অর্থাৎ নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে, ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। তারপরও তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে! তার মানে হচ্ছে নারীর এই প্রতিরোধকে স্বীকার করা হলো না, নারীর অধিকারকে স্বীকার করা হলো না। কেউ কেউ বলছেন, এই বিচারের মাধ্যমে ধর্ষণকে উৎসাহ দেয়া হলো।
অথচ প্রকৃত সত্য হলো রেইহানা ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে খুন করেননি। ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ইরানের বিচার বিভাগ এতটা নারীবিদ্বেষী নয় যে, অন্যায়ভাবে একজন নারীকে ফাঁসি দেবে। হত্যাকান্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। ওই মহিলা তার দোষও স্বীকার করেছেন আদালতে। রেহানে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণেও ব্যর্থ হয়েছেন।
ঘটনাটি হচ্ছে দু’জনের অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় এবং এই খুনের ঘটনা ঘটে। সে ক্ষেত্রে পুরুষ লোকটি যে ভালো মানুষ ছিলেন তা বলার সুযোগ নেই। টানাপোড়েনের একটি পর্যায়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যার কারণে রেহানে লোকটিকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন। খুনের দুই দিন আগে রেহানে নতুন ছুরি কিনেছিলেন এবং তার এক বান্ধবীকে এসএমএস করেছিলেন যে, খুনের ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে। এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে যে, এই মহিলার সঙ্গে ইরানের আদালতের এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে তাকে ফাঁসি দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়ে দেবে। অথবা এই মহিলা ইরানের জন্য কোনো হুমকি ছিলেন সে কারণে তার ফাঁসি কার্যকর করা হলো। বরং যদি এমন হতো যে, খুন হয়নি বরং অবৈধ সম্পর্ক বা ধর্ষণের ঘটনার বিচার হচ্ছে তাহলে ওই পুরুষ লোকটাও মৃত্যুদন্ডের মুখে পড়ত। এবং এ ক্ষেত্রেও ইরানের আইন অনুসরণ করা হতো- দেখা হতো না কে পুরুষ আর কে নারী; যেমনটি দেখা হয়নি রেহানের ক্ষেত্রে।
যদি ঘটনাটা পুরুষের বেলায় ঘটত তাহলে কি পুরুষ লোকটা বেঁচে যেতেন? নিশ্চয় নয়, ইরানের আইনের মূলভিত্তি হচ্ছে ইসলামি বিধান। যে অন্যায় ঘটেছে তার জন্য নারী-পুরুষ মুখ্য বিষয় নয়; মুখ্য বিষয় হচ্ছে আইন এবং তার বাস্তবপ্রয়োগ। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর বহু খুনের ঘটনার বিচার হয়েছে এবং মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে দোষীদের; সেখানে নারী-পুরুষ কখনো বিবেচ্য বিষয় হয়ে ওঠেনি; বিচার হয়েছে অপরাধের।
২০০৭ সালে সংঘটিত হয় আলোচ্য হত্যাকাণ্ডটি। ঘটনাটি সাত বছর ধরে পুঙ্খানুপঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর ইরানের আদালত রায় দিয়েছে। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে পরে আবার বিচার হয়েছে এবং রায় বহাল রাখে। তারপরও এক মাস দেরি করা হয়েছে যে ভিক্টিম পরিবার যদি মাফ করে দেয় তাহলে ফাঁসিটি কার্যকর করা হবে না। কিন্তু ওই পরিবার মাফ করেনি। ইরানের বিচার ব্যবস্থায় খুনের ঘটনায় কারো মৃত্যুদন্ড হলে ভিক্টিম পরিবার ছাড়া কারো পক্ষে সে রায় উল্টানোর সুযোগ নেই এমনকি প্রেসিডেন্ট বা সর্বোচ্চ নেতাও পারেন না।
0 comments: