গল্প @ প্রেমের জন্য মরণ -----
গল্প @ প্রেমের জন্য মরণ -----
সেলিনা জাহান প্রিয়া
না আমি দাঁড়াবো না। আর তোমার কথা শুনার ইচ্ছা আমার নেই । তুমি কি বলবে আমি জানি ?
আমি যা বলব তুমি জান ? তাহলে আমার কথার উত্তর চাই । আমি উত্তর নিয়েই যাব । তুমি ভাল করে জান আমি কেমন ছেলে । আমি কোন কিছু ভয় পাই না।
তুমি মানুষ হলে তো তোমার ভয় থাকবে । তুমি বলতে চাও আমি মানুষ না।
না তুমি মানুষ না। যদি আনুস হতে তাহলে রাস্তায় আমাকে পথ আগলে দাড়াতে না। কোন ভাল ছেলে কখনো কোন মেয়ের পথ আগলে দাড়ায় না।
ঠিক আছে এখন যাও আমি কিন্তু আমার উত্তর চাই । উত্তর পাবে না । কারন আমার প্রেম করার মত বয়স হই নাই । আর বয়স হলেও আমি কোন দিন তোমার মত লম্পটের সাথে প্রেম করব না। ঠিক আছে দেখিস আমি কিন্তু তোর সাথে প্রেম করেই ছারব শ্যামলী । আচ্ছা করিস । এখন রাস্তা ছাড় আমার যেতে হবে ।
প্রতিদিন শ্যামলী কে রাস্তায় আফজল কিছু না কিছু বলবে । শ্যামলী আর কম কিসের সেও কিছু না কিছু আফজাল কে বলবে ।
শ্যামলীর বাবা নাই । মা একজন স্কুল শিক্ষিকা । মা খুব ভয়ে ভয়ে থাকে আফজল কে।
আফজলের বাবা খুব টাকা ওয়ালা মানুষ । কিন্তু ছেলেটা মানুষ হয় নাই । এলাকায় মাস্তানি করে বেড়ায় । আজ কাল ফিটিং খায় । কিছু ছেলে তার পিছু পিছু ঘুরে । শ্যামলী কে তাই এলাকার ছোট ছেলেরা দূর থেকে ভাবী ডাকে । শ্যামলী কে যেহেতু আফজল পছন্দ করে তাই মহল্লার অন্য ছেলেরা ভুলেও শ্যামলীর দিকে তাকায় না।
শ্যামলী আজ কাল খুব চালাকি করে একেক সময় একেক দিক দিয়ে যায় । এবার একেক সময় একেক দিক দিয়ে বাসায় আসে । আফজল কোন ভাবেই কয়েকদিন যাবত শ্যামলী কে পাচ্ছে না। তাই তার বাহিনী কে বিভিন্ন জায়গায় শ্যামলীর গতিবিধি দেখার কাজ দিয়েছে । আফজল কয়েকটা জায়গায় আড্ডা দেয় । একজন এসে বলল শ্যামলী ভাবিকে আজ একটা পোলা রিক্সা করে নিয়ে এসেছে । পোলাটা অনেক সুন্দর । এই কথা শুনা মাত্র আফজল শ্যামলীদের বাসার সামনে গিয়ে অবস্তান নিল । দুপুর থেকে সন্ধ্যা । আফজল একটা টেনিস বল শ্যামলীর বাসার ভিতরে ঢিল দিয়ে ফেলল । সেই টেনিস বল আনতে বল্টু কে পাঠাইল । বল্টু শ্যামলীদের বাসায় গেল বল আনতে । শ্যামলী বল্টু কে বলল
-----কিরে বল খুজিস
----- জি ভাবী ?
----- আমি তোর কোন ভাই এর বউ । এই বলে বল্টুর কলারে ধরে ।
----- আপা ভুল হয়েছে । আপনেরে ভাবী না ডাকলে আফজল ভাই আমাকে সাইজ করব
------ তাই । আমি যে সাইজ করব এটা একবার ও তোর মনে হয় না।
------ আপা আপনি আমাকে কোন দিন মারবেন না। আমি জানি আপনি ভাল ।
----- এই ল বল । যা , আর আসিস না। আর যদি বল আসে তাহলে কিন্তু খবর আছে------- আপা আপনার বাসায় মেহমান কে ?
----- আমার ছোট মামা । পুলিশ অফিসার ।
----- আচ্ছা আপা আসি । গেইটের সামনে গিয়ে বল্টু বলল ভাবী বল দেয়ার জন্য
থ্যাংকস ।
বল্টু বলল বস চলেন ভাবীর মামা পুলিশ অফিসার । আমি সব খবর নিয়েছি । এর মধ্যে শ্যামলীর মামা বাসা থেকে বের হল । আফজল শ্যামলীর মামাকে ডাক দিল । এই যে মিঃ একটু শুনেন । শ্যামলীর মামা বলল হ্যাঁ বলেন ।
----- কে আপনি ?
----- আমি বলি আপনি কে ?
----- আমি আফজাল এই মহল্লার পোলা
---- আমি ডি ভি পুলিশ অফিসার । আমার নাম রাসেদ খান ।
---- আফজল বলল এই ডি কার্ড দেখি ?
---- শ্যামলীর মামা কোমর থেকে পিস্তল বের করে বলল এ দিকে এসো । কার্ড দেখাই ।
আফজল এক দৌড় দিয়ে দেয়াল টোপকে পালালো । সাথে সব । শ্যামলী ছাদ থেকে দেখে গেইট খুলে তার মামার কাছে আসে । মামা জানতে চায় কে এই ছেলে ? শ্যামলী বলে আরে মামা এরা এলাকার ছেলে , ভাবছে অন্য কেউ হয়ত , কিছু মনে নিও না । মামা তুমি যাও । শ্যামলী তার মামা কে আর কিছুই বলে না। শ্যামলী মা শ্যামলী কে বলে কি হইছে গেইটের সামনে ।
---- না মা কিছু না। মামার সাথে একটু কথা বললাম ।
----- আচ্ছা গেইটের ভিতরে আয় ।
শ্যামলী বাসার ভিতরে চলে যায় । রাতে শ্যামলীর মা বলে তো মামা কে বলা উচিৎ ছিল আফজাল যে তকে রোজ রাস্তায় জালায় । শ্যামলী একটু রাগ করে বলল মা তুমি না বেশি কথা বল । মামা কি সারা দিন আমাকে পাহারা দিবে । আর তুমি কি মনে কর আফজল আমাদের ছেড়ে দিবে । কি দরকার আফজল কে আমাদের ধমক দিয়ে । আমি কলেজ থেকে পাশ করলে বিশ্ব বিদ্যালয়ে চলে যাব । তখন আর আমাকে জালাবে না।
শ্যামলীর মা বলে ঠিক আছে মা কিন্তু সাবধান যারা থাকে তারাই ভাল থাকে ।
খুব সকালে মহল্লার হই চই শুনে শ্যামলীর ঘুম ভাঙে । কি হইছে জানতে চাইলে একজন
বলে নতুন বাড়ি করছিল যেই লোক তাঁকে নাকি আফজল গুলি করেছে । এখন পুলিশ আসছে এলাকায় । শ্যামলী জানতে পাড়ে একজনের কাছে যে আফজল নিজেই গুলি করেছে । সারা এলাকা পুলিশ সাংবাদিক এসে ভরে গেছে । আফজল কে পুলিশ পাই নাই । আজ আর শ্যামলীর কলেজে যাওয়া হল না। একবার আফজলের বাসায় গিয়ে দেখে আফজলের মা খুব কান্না করছে । কিছুটা সময় থেকে বাসায় চলে আসে । পরের দিন কলেজে যাবার সময় আর আফজল কে পায় না। অনেক বার শ্যামলী মনে মনে আফজল কে খুজে । তিন দিন পড়ে এক গলিতে আফজলের সাথে দেখা । শ্যামলীর জন্য মনে হয় অপেক্ষা করছিল । শ্যামলী কে দেখে বলল
----- মনে একটু শান্তি পেলাম ।
----- সবাইকে অশান্তিতে রেখে একা একা শান্তি পাওয়া খুব ভাল ।
----- বা ! আমার জন্য চিন্তা হয় ।
----- রাস্তার একটা কুকুর যদি প্রতিদিন এক জায়গায় দেখি । আর একদিন না দেখলে
তার জন্যও মায়া হয় ।
----- আমি কি তাহলে সেই কুকুর ।
----- কুকুর হলেও ভাল হত । একটা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে পারতাম ।
----- বাহ ! কথাটায় মজা পাইলাম । মনে মনে নিজেকে মজনু মনে হচ্ছে ।
----- আমি যাই । কেউ দেখলে ভাববে আমি মনে হয় তোর প্রেমে পরছি ।
----- আমি আফজল ছাড়া তোর কপালে আর কেউ নাই ।
----- ভাল তো কপালে তাল গাছ লাগাও । নাতি পুতি খেতে পাড়বে ।
আফজল একা একা হেসে বলে তুই একমাত্র শ্যামলী আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারিস । খোদার কসম অন্য কোন মেয়ে হলে আমি কি জিনিস বুঝিয়ে দিতাম ।
শ্যামলী একটু হেসে বলে ঝামেলা শেষ কর । নিজের দিকে দেখ চেহারা কি অবস্তা ।
শ্যামলী বাসার দিকে চলে আসে । বল্টু আফজল কে বলে বস ভাবী কিন্তু আপনাকে পছন্দ করে । আফজল বলে পছন্দ না করে যাবে কোথায় ।
দিন দিন এলাকায় আফজল খুব ভয়ঙ্কর হয়ে যাচ্ছে । কেউ কেউ সব কিছুতেই আফজলের নাম করে অপরাধ করছে । আবার একটু খুন তাও আফজলের নাম।
গত এক বছরে পুলিশ তাঁকে ধরতে পারছে না। মাঝে মাঝে শ্যামলীর সাথে কথা হয় রাস্তায় । শ্যামলী মনে মনে আজকাল আফজল কে ভাবতে থাকে । আফজল আর যাই হউক তাঁকে কোন দিন বাজে কথা বলে নাই । আজ শ্যামলীর জন্ম দিন । একটা সুন্দর শাড়ি পরেছে । নিজের হাতে একটু পোলাও রান্না করেছে । শ্যামলী গেইট থেকে বের হয়ে দেখে তার গেইটে কেউ না কেউ পাহারা দেয় । তাদের একজন কে বলে এই তোর বস কোথায় ? একজন বলল ভাবী বসের কথা কি কোন দিন কাউকে বলা যায় ।
শ্যামলী বলল একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব । আমাকে নিয়ে চল বলছি । শ্যামলী কে নিয়ে ঐ ছেলে এক বাসার ছাদে যায় । শ্যামলীকে দেখে আজ আফজল যেন আসমান থেকে পরেছে । শ্যামলী বলে এমন করে চাইতে হবে না । নাও মাস্তান এটা খেয়ে আমার
জীবন ধন্য কর । আফজল আজ পোলাও খেয়ে একটু কান্না করে দিল । শ্যামলী একি কান্না করছ কেন ?
----- শ্যামলী তুই যে কোন ছেলে কে বিয়ে কর আমাকে না।
----- কেন তকে না। আমি তকেই বিয়ে করব ?
----- না শ্যামলী ? আই এম সরি । আমাকে ক্ষমা কর । তোর সুন্দর জীবন আমি নষ্ট
করতে চাই না।আমি একটা নষ্ট ছেলে । দেখ ঐ ঘরে আমি একটা মেয়ে এনে রেখেছি ফুর্তি করার জন্য । শ্যামলী বলে আমি কাউকে দেখতে চাই না।
তুমি হাজিরা দিয়ে জাবিন নাও । তার পড় দেশের বাহিরে চলে যাও । আমি লিখা পড়া শেষ করি । পড়ে অন্য অন জেলায় চলে যাব । যেখানে তোমাকে আমাকে কেউ চিনবে না।শ্যামলীর মা মেয়ে কে খুব বুঝতে চেষ্টা করে । কিন্তু শ্যামলী বলে মা জীবন আমার
আর আমি আমার জীবনের ভাল মন্দ বুঝি ।
দিনে দিনে অপরাধ বেঁড়েই চলছে আফজলের । শ্যামলীর পরীক্ষা শেষ । কলেজ থেকে
বাসা পর্যন্ত শ্যামলীকে সবাই ভয় পায় । এমন কি রিক্সা ওয়ালা পর্যন্ত সালাম দেয় ।
সবাই মনে মনে বলে এত সুন্দর একটা মেয়ে কিনা সন্ত্রাসী একটা ছেলে কে ভালবাসে ।
পুলিশের খাতায় তার নাম শীর্ষ ১০ এ চলে আসে । সবাই আফজল কে এখন এক নামে চিনে । আর নাম বলার আগে ছোট বড় সবাই তাঁকে ভাই বলে ডাকে । স্থানীয় থানায়
আফজলের ইনফ্রমা আছে । কিছু কিছু পুলিশ আফজলের সাথে গোপনে যোগাযোগ রাখে।তাই তাঁকে কেউ ধরতে পাড়ে না।
শ্যামলীর মামার কাছে আফজলের কেইস ফাইলটা আসে । তার সিনিয়র অফিসার বলে
জীবিত বা মৃত এই কেইস টা শেষ কর । জীবিত ধরলে ও তাঁকে ক্রোস ফায়ার দিতে হবে । তোমাদের ব্ল্যাক কুব্রা টিপ এই কাজটা করতে হবে । এটা তোমাদের টিমের জন্য
একটা চ্যালেঞ্জ । শ্যামলীর মামা বেশ মিঃ জি এম গুলজার কিছুতেই মনে করতে পারছে না এর আগে আফজল কে কোথায় দেখেছে । বাসার ঠিকানা চোখে পড়তেই মনে পড়ে যায় শ্যামলীদের বাড়ির বাসার কথা ।
রাতেই শ্যামলীর বাসায় গুলজার আসে । শ্যামলী কে বলে মা শ্যামলী তোমার এলাকার
সেই মাস্তান ছেলের কি খবর । শ্যামলীর মা বলে ভাই আর বলিস না । শ্যামলী তো ঐ গুন্ডা ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না।
---------গুলজার বলে কেন ? আপা ছেলে কি খুব বেশি খারাপ ?
-------- হ্যা ,রোজ পুলিশ তাঁকে খুজে ?
-------- গুলজার শ্যামলীর মা কে বলে আরে আপা বাদ দাও । আজকালের ছেলেরা একটু এমন সাহসী না হলে চলে না। মা শ্যামলী আমার সাথে একদিন দেখা করাও ।
দেখি আমি ওকে একটা ভাল বুদ্ধি দিব ।
শ্যামলী তার মামা কথা বিশ্বাস করে । দেখা করে আফজলের সাথে । আফজল বলে শ্যামলী তুমি যখন বলছ তাহলে দেখা করব । শ্যামলী বলে আমি সাথে থাকব ।
গুলজার তার টিম কে প্রস্তুত রাখে । গুলশান একটা ফুডের দোকানে শ্যামলী আর আফজল আসে । আফজল একটা সাদা মাঞ্জাবি পড়ে আসে । শ্যামলী আফজলের হাত ধরে রাখে । আফজল মনে মনে চিন্তা করে আমি ভাল হয়ে যাব । শুধু শ্যামলীর জন্য ভাল হয়ে যাব । একটা পিজা খেতে খেতে শ্যামলীর মামা চলে আসে । ফাস্ট ফুডের দোকান চার দিক পুলিশ ঘিরে ফেলে । শ্যামলী কিছু বলার আগেই শ্যামলীর মামা বলে মা তুমি আমার গাড়িতে যেয়ে বস । আফজল কোমর থেকে পিস্তল বের করার আগেই
তাঁকে পুলিশ ধরে ফেলে । আফজল কে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে ।
একটা গাড়ি শ্যামলী কে বাসায় পৌঁছে দেয় ।
গুলজার তার বস কে ফোন করে স্যার আফজল আমার গাড়িতে । এরেস্ট করা হয়েছে । বস বলে সুট । বনশ্রী শেষ মাথায় নিয়ে তাঁকে সুট করা হয় ।
রাতের ১০ টার খবরে শ্যামলী জানতে পাড়ে ক্রস ফায়ারে আফজল নিহত ।।
শ্যামলী একটা চিৎকার করে মামা বলে...........................।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)

0 comments: